প্রকাশকের কথা
মত প্রকাশের স্বাধীনতা বর্তমান দুনিয়ার একটি অন্যতম আলোচিত ও স্বীকৃত অধিকার। স্বাধীন মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে যে কোন বিষয়ে নিজস্ব মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি অপরকে জানানো। বিষয়টি যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ের হয়, তা হলে তা ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং যদি সেটি রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট হয়, তাহলেও সে ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করার সুযোগ তার থাকা আবশ্যক। এই সাধারণ অধিকারটির প্রতি সকলেই কম বেশি উদার মনোভাব পোষণ করে থাকেন। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় তখনই যখন কেউ তার অধিকারের মাত্রা ছাড়িয়ে যান অর্থাৎ স্বাধীন মত প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ যখন কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে অনধিকার চর্চা করেন বা রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের পরিপন্থী কোন বিবৃতি দিয়ে বসেন অথবা ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি বিভ্রান্তিমূলক এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান করতে থাকেন। এ ধরনের আচরণের ফলে ব্যক্তিগত সংঘাত শুরু হয়। কখনো বা তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ ধরনের আচরণ মানুষ কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে, কখনও অজ্ঞতার কারণে করে থাকেন। যারা জেনে শুনে, অসৎ উদ্দেশ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার করেন তারা অবশ্যই মানবীয় আইনে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে থাকেন। কিন্তু যারা অজ্ঞতাবশত সীমালংঘন করে থাকেন, তাদের জন্য এ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ বইটি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এতে ধর্মীয় দিক নির্দেশনার আলোকে মত প্রকাশের অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করে গ্রহণযোগ্য পরিসর নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে।
কাজের নিষেধ, নসিহা বা আন্তরিক সদুপদেশ, শুরা বা পারস্পরিক পরামর্শ, ইজতিহাদ বা স্বাধীন যুক্তিপূর্ণ অভিমত প্রদান এবং আল মুয়াৱাদা বা গঠনমূল সমালোচনা, হুররিয়াত আল বানিয়া বা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতার মতো মূলনীতিসমূহে ইসলামে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি সমর্থিত হয়েছে। এ বিধি নিষেধ, নৈতিক সংযন শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ে যে বিষয়টির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তা হলো মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ। দু’ক্যাটাগরির- এবং নৈতিক, দুই: আইনগত। নৈতিক ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে কুৎসা রটনা, তিক্ত কটু কথা বলা, অপরের দুর্বলতা প্রকাশ করা এবং বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অভিযোগ। এছাড়া মিথ্যা অপবাদ, মানহানিকর কথা, অপমান করা ও ধর্মাবমাননার মতো বিষয় আইনগত ক্যাটাগারির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে আইনগত সংযম প্রদর্শনের বিষয়ের মধ্যে রয়েছে প্রকাশ্যে ক্ষতিকর কথা উচ্চারণ, মিথ্যা অপবাদ দান, অবমাননা করা, অভিশাপ প্রদান, কোন মুসলমানকে কাফের বলা, বিদ্রোহ ও ধর্মাবমাননা।
গ্রন্থটির শেষে প্রদত্ত ৫টি পরিশিষ্টে হক, হুকম ও আদল, মালয়েশিয়া, মিশর ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি মুসলিম দেশে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাসঙ্গিক আইনের তুলনামূলক আলোচনা এবং সালমান রুশনীর প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। গ্রন্থটির শেষে সংযোজিত হয়েছে গ্রন্থপঞ্জী ও শব্দার্থ। গ্রন্থটি প্রকাশিত হবার পর মালয়েশিয়ার মর্যাদাপূর্ণ ইসমাইল আল ফারুকী এ্যাওয়ার্ড ফর একাডেমিক এক্সিলেন্স লাভ করে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রদত্ত রিপোর্টে বলা হয় “ইংরেজী, আরবী বা উর্দু ভাষায় ইসলামী আইন সংক্রান্ত কোন গ্রন্থে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে এতো গভীরভাবে আলোচনা করা হয়নি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট এ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটি বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে তাদের মাতৃভাষায় পাঠের সুযোগ করে দিতে এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। তারা অনুগ্রহ করে আমার ওপর বইটি তরজামার দায়িত্ব দেয়। বইটি তরজমার ক্ষেত্রে বিআইআইটির উপ-নির্বাহী পরিচালক ভাই আব্দুল আজিজ, মুফতি আব্দুল মান্নান ও আরো অনেকে আমাকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, আমি তাদের সকলের কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ । বইটি বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের বিশেষ করে ইসলাম নিয়ে যারা চিন্তা ভাবনা করেন তাদের ভালো লাগবে বলে আশা করছি।
-মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম
There are no reviews yet.