প্রকাশকের কথা
ইসলামি উম্মাহ’র গৌরবময় বিকাশ ও দুঃখজনক অধঃপতনের ইতিহাস সত্যিকার অর্থে মানব ইতিহাসের একটি চিন্তা উদ্দীপক অধ্যায়। যে সমস্ত কার্যকারণ ইসলামি উম্মাহকে বিশ্বব্যাপী চিন্তা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চতম শিখরে পদচারণায় সহায়তা করেছিল সেগুলোর ব্যাপক বিচ্যুতি কিভাবে ঘটেছে এবং এর ফলে মুসলমানগণ কীভাবে অধঃপতনের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে তা নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও গভীর গবেষণা ইতিহাসে তেমন একটি দেখা যায়নি। খেলাফতে রাশেদার পতনের পর যদিও দেশে দেশে মুসলমানদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধি ঘটেছিল, সাংস্কৃতিক দিক থেকে মুসলমানদের একটি নবতর ধারা বিকাশ লাভ করেছিল, তথাপি এটি সত্য যে এসব উন্নয়নের সংগে ইসলামের মূল প্রাণশক্তির উন্নয়ন ঘটেনি। ফলত: একটি পর্যায় অতিক্রম করার পর ইসলামি সভ্যতা অধঃপতনের দিকে চলতে শুরু করে এবং বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বজাতিসমূহের মধ্যে মুসলিম জাতির অবস্থান সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
মুসলিম উম্মাহর রোগসমূহের মধ্যে যেটি সবচেয়ে মারাত্মক সেটি হল ‘তাওহিদের ধারণা’ সম্পর্কে বিভ্রান্তি এবং দুঃখজনক অপর্যাপ্ততা। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহর একত্ব কতখানি ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ মুসলমানরাই এ সম্পর্কে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছেনা। এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর আলোচনার বিষয়। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ব হচ্ছে ইসলামের মূল ও কেন্দ্রীয় শক্তি। মুসলমানদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যাপ্তি, সঠিকভাবে মুসলিম হিসেবে বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুবরণ করা নির্ভর করে তাওহিদ সম্পর্কীয় সঠিক ধারণার ওপর। মুসলমানদের আধ্যাত্মিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম তাওহিদের ধারণাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
এ গ্রন্থটিতে ইসমাঈল রাজী আল-ফারুকী ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সবিস্তারে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেছেন। ইতিহাসের পথপরিক্রমায় বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির উত্থান ও পতনের ইতিহাস, দর্শন ও নৃতত্ত¡ থেকে তিনি আলোচনার উপাদান সংগ্রহ করেছেন। ফলে তাঁর আলোচনা বিষয়টির অত্যন্ত গভীরে চলে গেছে এবং আলোচনাও প্রাণবন্ত হয়েছে। বস্তুত গ্রন্থটি ফারুকীর এক অনবদ্য সৃষ্টি বলতে হবে। এটি ইংরেজীতে রচিত। বইটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিআইআইটি এটি বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলা সাহিত্যের একজন সুপন্ডিত ও কথাশিল্পী অধ্যাপক শাহেদ আলী এ বইটি বাংলায় অনুবাদ করে যেমন বিআইআইটি’র ধন্যবাদার্হ হয়েছেন, তেমনি বাংলা ভাষার অগণিত পাঠককেও তিনি কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। শারীরিক দুর্বলতা নিয়েও মৃত্যুর পূর্বে এ বইটির জন্য তিনি যে পরিশ্রম করেছেন সে জন্য আল্লাহর কাছে তাঁর মাগফিরাত কামনা করি।
অনুবাদ কর্ম একটি কঠিন কাজ। এ কাজের সম্পাদনাও সহজসাধ্য নয়। এ আয়াসসাধ্য কাজটি করেছেন জনাব আহমদ ফরিদ এবং ড. মুঈনুদ্দীন আহমদ খান। তাঁদের কাছেও বিআইআইটি কৃতজ্ঞ।
পরিশেষে যাদের জন্য এ প্রয়াস সে বিদগ্ধ পাঠক সমাজ এ অনুবাদ কর্ম থেকে উপকৃত হলে আমরা আমাদের শ্রমকে স্বার্থক মনে করব। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। বর্তমানে ব্যাপক পাঠক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বইটির তৃতীয় সংস্করন প্রকাশিত হলো। আল্লাহ আমাদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমীন
ড. এম আবদুল আজিজ
নির্বাহী পরিচালক
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট (বিআইআইটি)
There are no reviews yet.